Six Points for a Platform of Revolutionary Unity Today
যুদ্ধবাজ পাক- ভারত ধ্বংস হোক। কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এগিয়ে চলুক !
Apu Sarwar: The Heretage Marxist Should Renounce (in Bangla Language, বাংলা)
Anatomy of the Communist Party of Bangladesh (in Bangla Language, বাংলা)
Leon Trotsky - Open Letter to Workers in India [1939] (in Bangla Language, বাংলা)
এই ঐতিহাসিক সময়ে বিপ্লবী দায়িত্ব পূরণের জন্য সকল বিপ্লবী সংগঠন ও সক্রিয় কর্মীদের আহ্বান!
Open Letter from the International Secretariat of the Revolutionary Communist International Tendency (RCIT), 7 January 2019
আমরা ঐতিহাসিক সময়ে বাস করছি। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যাবস্থা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যাবস্থা সংকট যে কোন সময়ে বিস্ফোরিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। প্রধান স্টক মার্কেটগুলি দীর্ঘ সময় ধরে এক ধরণের আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , শেয়ার বাজার দ্রুত উঠানামার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।পুঁজিপতিরা ভবিষৎ মন্দার পদধ্বনির আতঙ্কে বাস করছে। এদের কেউ কেউ আশংকা করছে আসন্ন মন্দা ২০০৮ /০৯ এর চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।
বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির মধ্যে দখলদারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েই চলছে। বিশ বাণিজ্য নিয়ে সংঘাত , দক্ষিণ চীন সাগর , রাশিয়ান-ইউক্রেনীয় সীমান্তে উত্তেজনা, আফ্রিকা মহাদেশকে ভাগবাঁটোয়ারের চেষ্টা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির মধ্যে দখলদারী প্রতিযোগিতার বহিঃপ্রকাশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত "বিশ্বের পুলিশি" হিসাবে একক আধিপত্যের অবসানের ইঙ্গিত দেয়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইইউ, রাশিয়া এবং জাপানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দখলদারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অপর দিকে দেশে দেশে শ্রমিক ও নিপীড়িত মুক্তি সংগ্রামের নতুন ভাবে তরঙ্গায়িত হচ্ছে। সুদান, তিউনিশিয়া, লেবানন, জর্ডান এবং ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ, সিরিয়ার জনগণের চলমান বীরত্বপূর্ণ মুক্তি সংগ্রাম, ফিলিস্তিনি জনগনের উপনিবেশ বিরোধী লড়াই করছে। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, নিকারাগুয়াতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সংগঠিত হচ্ছে। এই সবই হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রেণী সংগ্রামেরে বহমানতা।
RCIT- The Revolutionary Communist International Tendency, একটি বিপ্লবী সংগঠন যা শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংগঠনিক কাজ রয়েছে। এর বেশ কয়েকটি দেশে জাতীয় বিভাগ রয়েছে। RCIT মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন এবং ট্রটস্কির আন্দোলনের তত্ত্ব ও অনুশীলনের উপর দাঁড়িয়েছে।
পুঁজিবাদ আমাদের জীবন এবং মানবতার ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে। পুঁজিবাদ আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও মানব সভ্যতাকে বিপন্নের পথে ঠেলে দিয়েছে। বেকারত্ব, যুদ্ধ, পরিবেশগত দুর্যোগ, ক্ষুধা, অভিবাসীদের জাতীয় নিপীড়ন, লিঙ্গ বৈষম্য এবং সকল ধরণের শোষণ পুঁজিবাদ- সাম্রাজ্যবাদের ফসল। আমরা পুঁজিবাদ নির্মূল করার লক্ষে কাজ করছি। মেহনতি মানুষের শোষণ বঞ্চনার অবসান শুধু চির অবসান শুধু মাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যেই সম্ভব। এই ধরনের সমাজ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
শ্রমজীবী ও নিপীড়িত সকলের মুক্তি শুধুমাত্র শোষণ ও নিপীড়ন ছাড়া শ্রেণীবদ্ধ সমাজে সম্ভব। এই ধরনের সমাজ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। RCIT সমাজের বিপ্লবের জন্য লড়াই করছে।
RCIT দেশে দেশে বিপ্লবীদের এক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ও রাজনৈতিক সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গি , অভিজ্ঞতা অপরাপর সংগঠনের সাথে সর্বাধিক সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত । আমরা নিচের কর্মসূচি সি লক্ষেই প্রণীত।
* * * * *
১ ) সাম্রাজ্যবাদীদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্ব : আমেরিকা, ইইউ, জাপান, রাশিয়া ও চীন
বিপ্লবী শক্তিকে সাম্রাজ্যবাদী সংকটকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করেই ভবিষৎ রণকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। মার্কিন, ইইউ এবং জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অবস্থানকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি নতুন উত্থানশীল শক্তি রাশিয়া ও চীনকেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে ব্যর্থ হলে রণকৌশল নিধারণে বিপর্যয় ঘটবে । সাম্রাজ্যবাদীদের অভ্যান্তরিন দ্বন্দ্বে বিপ্লবী শক্তি কোন পক্ষকেই সমর্থন করবে না। বিপ্লবীদের প্রধান স্লোগান হবে ' নিজ দেশের শাসক শ্রেণীকে পরাজিত ও উৎখাত কর। '
চীন ও ভারত নানান প্রতিদ্বন্দ্বী মূলক সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সংঘাত যে কোন সময়ে যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। চীন সাম্রাজ্যবাদী ও ভারত আঞ্চলিক শক্তি। চীন ও ভারত দ্বন্দ্বে / যুদ্ধে, ভারত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রক্সি হিসাবে কাজ করছে। এ যুদ্ধে বিপ্লবীরা যুদ্ধরত উভয় পক্ষের বৈপ্লবিক পরাজয়ের শ্লোগান তুলবে। নিজ দেশের শাসক শ্রেণীকে পরাজিত ও উৎখাত করার লক্ষে নিজ দেশে জনসাধারণকে সংগঠিত করবে।। সাম্রাজ্যবাদের অভ্ভন্তরীন দ্বন্দ্বে মন্দের ভাল কোন পক্ষ নেই, সকল পক্ষই সমানভাবে প্রতিক্রিশীল।
সাম্রাজ্যবাদকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হলে মার্ক্সবাদীরা সচেতনভাবে বা অজ্ঞানভাবে এক বা অন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে।
২ ) সাম্রাজ্যবাদ ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তির জন্য ধারাবাহিক সংগ্রাম সমর্থন
সম্ৰাজ্যবাদের কিংবা সাম্রাজ্যবাদের ছায়া শক্তি এবং নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধে, বিপ্লবীরা সবসময়ই নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির পক্ষে দাঁড়াবে। নিপীড়িত জনগণ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির পক্ষে দাঁড়ানো কোনোভাবেই প্রতিরোধ শক্তিকে (যেমন, ক্ষুদ্র বুর্জোয়া ইসলামপন্থী, জাতীয়তাবাদী) রাজনৈতিক সমর্থন হিসাবে বিবেচিত হবে না।
বিপ্লবী শক্তি রাশিয়াতে চেচেন বা চীনের উইগুরদের মতো নিপীড়িত জাতির মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে। কাতালোনিয়া (স্পেনের ) মত জাতি সুমুহের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে।
বিপ্লবীরা দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আক্রান্ত রাষ্ট্র ও নিপীড়িত জাতির পক্ষে দাঁড়াবে। বর্তমান সময়ে উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মালি, সোমালিয়া সহ দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিদুদ্ধে লড়াইরত শক্তিকে সমর্থন করে।
বিপ্লবীরা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সীমান্ত অভিবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করা, অভিবাসীদের নাগরিকত্ব অধিকার, ভাষা, সমান মজুরি সহ সমানতার জন্য লড়াই করবে।
বিপ্লবীরা কখনই সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের অভ্ভন্তরীন কোন পক্ষই সমর্থন করবে না , (উদাঃ, ব্রেক্সিট বনাম ইইউ; ক্লিনটন বনাম ট্রাম্প)।
৩ ) দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, ইহুদীবাদী ( Zionism) সহ সকল প্রকার প্রতিক্রিয়াশীলতা ও সম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে নিরন্তন সমর্থন
গত এক দশকে, ২00৮ সালে ফিলিস্তিন, তিউনিশিয়া, ইরান, সিরিয়া, মিশর, ইয়েমেন, সুদান ও অন্যান্য দেশে গণ অভ্যুথান গুলো শ্রেণী সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই গণআন্দোলন গুলো যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। এই গণআন্দোলন গুলোর পরাজয়ের কারণেই মিশরে আল সিসি এর সামরিক শাসন ,সিরিয়ায় আসাদের মত প্রতিক্রিয়াশীলরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়েছে।
গণআন্দোলন কিন্তু থেমে নেই । ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, মিশর এর গণআন্দোলনের ঢেউ তিউনিশিয়া, ইরান, সুদান এবং মরক্কোর মতো নতুন দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে । তিউনিশিয়া ও ইরানের পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন মধ্য প্রাচ্যের দেশে দেশে ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার কারণে সারা দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও বর্ণবাদী ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠছে। সাচ্চা বিপ্লবীরা দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন করবে কিন্তু কোন ভাবেই প্রতিক্রিশীল রাজনৈতিক শক্তির পিছনে দাড়াবেনা।
অনেক প্রগতিশীলরা ২০১১ থেকে শুরু হওয়া আরব বিপ্লবকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে, এই বিপ্লবের পতন হয়েছে কিংবা কোন সম্ভবনা এমন ভেবে যারা এই ধরণের আন্দোলনকে সমর্থন করতে গড়িমসি করে তারা প্রকৃত বিপ্লবী নন।
বিপ্লবীরা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এর মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধের বিরোধিতা করে। উদাহরণ হিসাবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, মিশর, সুদান, ইথিওপিয়া যুদ্ধ গুলোর বিরোধিতা করে। বিপ্লবীরা যে কোন যুদ্ধের চরিত্রের বিশ্লেষণ করে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভূমিকা (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন) এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে বিপ্লবী কৌশল নির্ধারণ করবে।
৪ ) গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণের বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রাম
শোষণ - বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিক সহ নিপীড়িত মানুষদের সংগঠিত করার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক ভাবে শ্রেণী অবস্থান, শ্রেণী শত্রূ চিহ্নিত করা। বিপ্লবীরা দেশে দেশে সকল ধরণের প্রতিক্রিয়াশীল, একনায়কতন্ত্র, নামে - বেনামে সামরিক শাসন, দুর্নীতিবাজ , কর্তৃত্ববাদী এবং মেকী গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামকে সমর্থন করবে। বিপ্লবীরা দেশে দেশে সকল ধরণের জাতি ও ভাষার সমান অধিকার এর পক্ষে এবং জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামরত দের পাশে দাঁড়াবে।
দেশে দেশে শাসক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার বিকল্প বিপ্লবীদের নেই , প্রতিক্রিশীল শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার অবকাশ নেই। শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নীরবতা ও নিরপেক্ষতা, শ্রমিক শ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক।
৫) গণআন্দোলনে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল কৌশল
বিপ্লবীরা গণ আন্দোলনের প্রশ্নে সকল সংকীর্ণতাকে পাশকাটিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল গ্রহন করবে। গণ আন্দোলনের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের হাতে নেই সেই অজুহাতে গণ আন্দোলন থেকে বিরত থাকা আন্দোলনের পিছনে ছুরিকাঘাতের সামিল । যুক্ত ফ্রন্ট উদ্যোগ হচ্ছে যার মাধ্যমে কমিউনিস্টরা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির মৌলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য স্বকীয়তা বজায় রেখে অন্য দলগুলোর সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করে। গণ আন্দোলনে যুক্ত ফ্রন্ট কৌশল প্রয়োগ না করে আন্দোলন চালিয়ে নেবার কথা বলা বিমূর্ত বিবৃতি ছাড়া কিছু নয়। বিপ্লবীরা তথাকথিত "প্রগতিশীল" বুর্জোয়া দলগুলোর অধীনস্থ / জোটবদ্ধ পপুলার ফ্রন্ট গঠনের বিপক্ষে।
৬ ) বিপ্লবী পার্টি গঠন
একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়েই সকল ধরণের প্রতিক্রিশীলতার অবসান ও শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তি সম্ভব। শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়েই পুঁজিবাদী শ্রেণির শোষণ বঞ্চনার অবসান হয়ে সমাজতন্ত্র অভিমুখে সমাজ গঠন সম্ভব। ইতিহাসের শিক্ষা, বিপ্লবী পার্টি ছাড়া গণআন্দোলনের ফসল, জনগণের ত্যাগ - তিতিক্ষা মেহনতি মানুষের পক্ষে যায় না।
বিপ্লবী পার্টি শ্রমিকশ্রেণির সর্বাধিক রাজনৈতিক সচেতন এবং নিবেদিত যোদ্ধাদের সংগঠিত করে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করবে। একটি দেশে অথবা নিদৃষ্ট ভূখণ্ডের পার্টি আন্তর্জাতিক পার্টির অংশ হিসেবেই কাজ করবে। বিপ্লবী পার্টি দেশে দেশে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।
আমাদের ডাক
আমরা সকল সমাজতান্ত্রিক সংগঠন এবং কর্মীকে আহ্বান করছি প্রধান প্রধান কর্মসূচির ভিত্তিতে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানোর। শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালানোর। শ্রেণীর আন্তর্জাতিক পার্টি গঠনে লক্ষে রাজনৈতিক প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক প্রস্তুতির জন্য যৌথ যোগাযোগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব বাড়ছে। RCIT আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ও রাজনৈতিক সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গি , অভিজ্ঞতা ভাগ অপরাপর সংগঠনের সাথে সর্বাধিক সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ।
বিপ্লবী ঐক্য মোর্চা গঠনে Revolutionary Communist International Tendency (RCIT) এর ছয় দফা প্রস্তাবনা, ফেব্রুয়ারী ২০১৮
Statement of the Revolutionary Communist International Tendency (RCIT), 27 February 2019, www.thecommunists.net
(এক ) ২৬ ফেরুয়ারি ২০১৯ ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের পূর্ব খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহরে বিমান হামলা করে , ভারতীয় ৩০০ জন জঙ্গী নিহত হওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ বোমা হামলায় কেউ নিহত হওয়ার কথা অস্বীকার করে। অব্যাহত বিমান হামলার সময় পাকিস্তান দুটি ভারতীয় বিমান গুলি করে গুলি করে এক পাইলটকে আটক করে.একই দিনে চারজন পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়।
( দুই ) ভারত সরকার বিমান হামলাকে ১৪ ফেরুয়ারি ২০১৯ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামার এ জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (জেএম), জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার জবাব হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে। এই হামলায় ৪২ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী সদস্য নিহিত হয়েছে। এই হামলার দায় জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (জেএম) স্বীকার করেছে।
( তিন ) ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম বড় মতো পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত । ভারতের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানান জরিপে মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির জোট সাধারণ নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানের সম্ভবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিমান হামলার পেছনে ভারতের আসন্ন এপ্রিল - মে ২০১৯তে নির্বাচনের ভোটকে প্রভাবান্বিত করার বিষয়টি বহুল আলোচিত। পাকিস্তানে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে হিন্দু গোঁড়ামিবাদ ও দেশ প্রেমেকে উস্কে দিয়ে ভোট ফায়দা নেয়ার পায়তারা থেকেই এই বিমান হামলা। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পারমাণবিক অস্রধারী।
( চার ) পুলওয়ামাতে ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিহত হবার ঘটনাকে ' নিরাপত্তার ' অজুহাত হিসেবে ব্যাবহার করে ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক গ্রেফতার, বাড়ি - বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক সহ প্রথম সারির বেশ কয়েক জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দমন পীড়নের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদী সংগঠন দই দিনের হরতালের পালন করে।
( পাঁচ ) RCIT -Revolutionary Communist International Tendency ভারতীয় আগ্রাসনের জোরালো প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির জোট কাশ্মীর ও পাকিস্তান আক্রমণের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। ভারত ও পাকিস্তানের আধিপত্য বাদী লড়াইয়ে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিকরা কোন পক্ষকে সমর্থন করেনা। আমরা উভয় পক্ষের বিপ্লবী পরাজিত অবস্থানের আহ্বান জানাই।
( ছয় ) ভারত ও পাকিস্তানের দখল দারিত্ব ও যুদ্ধবাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবীরা কাশ্মিরি জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করে। ভারতীয়, পাকিস্তান এবং চীন কাশ্মীর দখল করে রেখেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ৮ লাখ ভারতীয় সেনা, বিএসএফ , পুলিশ সহ নানান পদের সামরিক বাহিনী মোতায়ন করেছে ভারতীয় সরকার।প্রতি দশ কাশ্মিরিদের জন্য একজন ভারতীয় সৈনিক আছে। কাশ্মীরি সাধারণের জীবন সেনা খবরদারীরর হাতে জিম্মি। ১৯৮৯ সন থেকে যে গণবিদ্রোহ শুরু হয়েছে , এই গণবিদ্রোহে প্রায় একলাখ মানুষ ভারতীয় বাহিনীর হাতে খুন হয়েছে , ১০ হাজারের মত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের ব্যাবহৃত গাদা বন্দুকের ( pellet gun ) গুলিতে হাজার হাজার মানুষ আহত ও দৃষ্টিহীন হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণ সবসময় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, এই সংগ্রামের প্রতি আমাদের আকুন্ঠ সমর্থন ।
(সাত ) RCIT- কাশ্মীর থেকে সকল বিদেশী সেনা ( ভারতীয়, পাকিস্তানী ও চীনা বাহিনী) প্রত্যাহারের জোর দাবী জানাচ্ছে। অবিলম্বে কাশ্মিরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ, কাশ্মির থেকে আধা সামরিক বাহিনী ও সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (Armed Forces Special Powers Act - AFSPA) বাতিল করার দাবী জানাচ্ছি । আমরা কাশ্মীরের শ্রমিক, ও মেহনতিকে গণঅভ্যুথান - গণসংগ্রামের লক্ষ্যে সংগঠিত আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কাশ্মীরি মুক্তিকামী জনগণ কর্তৃক নিপীড়ন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে যৌক্তিক মনে করি। তবে গেরিলা আক্রমণের কৌশলকে ভুল এবং আত্মঘাতী হিসাবে বিবেচনা করি। আমরা কাশ্মীরে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী সংগঠনের মতাদর্শকে সমর্থন করি না। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের প্রতি আমাদের নিঃশর্ত সমর্থন।
(আট ) RCIT- কাশ্মিরি জনগণের স্বাধীনতারসংগ্রামকে পুরোপুরি সমর্থন করে। ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন কাশ্মীরি শোষণ মুক্ত ও সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে কাশ্মীরের মেহনতি জনগণকেই নিরন্তন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। আমরা কাশ্মীর সহ সকল জাতিসমুহের সমতা ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে নিজ নিজ দেশের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান জানাচ্ছি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিজয় এশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশনের সম্ভবনাকে এগিয়ে নিবে।
( নয় ) কাশ্মীরের আত্ম নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে , স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রশ্নে ভারতের বড় - বড় বামপন্থী দলগুলোর ভূমিকা ন্যাক্কার জনক। অবিভক্ত সিপিআই ১৯৫৩ সন পর্যন্ত কাশ্মীরের আত্ম নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে , স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারকে সূর্থন করতো।
আজকের সিপিআই , সিপিএম , ভারতীয় কাঠামোর মধ্যে কিছু স্বায়ত্ব শাসন ,কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে হলেও কাশ্মীরিদের পূর্ণ স্বাধীনতা অথবা গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরি জনগণের ভাগ্য নিধারণ করার পক্ষে নয়।
নকশাল আন্দোলনের সময় সিপিএম ( এম- এল ) সঠিক ভাবেই কাশ্মীর সহ ভারতের আত্ম নিয়ন্ত্রণের সংগ্রামরতদের ভারত থেকে পৃথক হওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে বহুধা বিভক্ত সিপিএম ( এম- এল ) এর অনেক গুলো ধারা কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহার ও স্বায়ত্ব শাসন এর পক্ষে থাকলেও নিপীড়িত জাতিসমুহের স্বাধীন হওয়ার অধিকারের পক্ষে নয়।
আন্তর্জাতিকতার ,
নিহত সৈন্যদের প্রতি "সহানুভূতি ও সমবেদনা" প্রকাশের ছদ্দাবরণে পাকিস্তান ও ভারতের কোন কোন বামপন্থী দল শাসক শ্রেণীর পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। Jammu Kashmir Awami Workers Party, Radical Socialist (India) and the Pakistan Trade Unions Defense যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম, গেরিলা আক্রমণ কে নির্লজ্জ ভাবে ' সন্ত্রাসবাদ ' হিসেবে অভিহিত করছে। (Joint Statement by the Jammu Kashmir Awami Workers Party, Radical Socialist (India) and the Pakistan Trade Unions Defense, 23 February 2019).
জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কাশ্মীরি মুক্তিকামী জনগণ কর্তৃক নিপীড়ন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে যৌক্তিক মনে করি। তবে গেরিলা আক্রমণের কৌশলকে ভুল এবং আত্মঘাতী হিসাবে বিবেচনা করি। আমরা কাশ্মীরে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী সংগঠনের মতাদর্শকে সমর্থন করি না। গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের প্রতি আমাদের নিঃশর্ত সমর্থন।
(দশ ) জাতি সুমুহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও নিপীড়িত জনগণ এর মুক্তি সংগ্রামের জন্য কাশ্মীর সহ পাকিস্তান, ভারত ও দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণির দল গঠনের বিকল্প নেই। RCIT পার্টি গড়ার সংগ্রামে অপরাপর বাম প্রগতিশীল শক্তির সমর্থন প্রত্যাশী।
নিউজিলান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ৫০ জন অভিবাসিত মুসলিম সন্ত্রাসী হামলায় নিহিত ও ৫০ জনের মত আহত হওয়ার ঘটনা বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছে। নিহতদের মধ্যে যুদ্ধ বিধ্স্ত সিরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য নিউজিলান্ডে আশ্রয় নেয়া মানুষদের শেষ রক্ষা হয়নি। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী সহিংস বর্ণবাদের উত্থানের সর্বশেষ ভয়াবহ সাক্ষ্য। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ।এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসীর সংখ্যা তেমন বেশি নয় । তবুও বর্ণবাদীরা অভিবাসীদের সভ্যতার হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করে এবং অভিবাসীদের হাতে চাকুরী , ব্যবসা , সংস্কৃতি হারানোর ভয়ের কথা প্রচার চালাচ্ছে। এই ধরনের নির্মম ঘটনা গুলো প্রায়শই ছোট ডান চরমপন্থী দল বা নেটওয়ার্কে, কখনো কখনো বা প্যাথোলজিক্যাল " নিভৃত চারি " দক্ষিণ পন্থীদের কাজ। তবে ঘৃণা বিস্তারের পিছনে ইউরোপ - আমেরিকায় অনেক বড় বড় রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয়। জার্মানিতে Pegida, ব্রিটেনে FLA এর Tommy Robinson, UKIP এর Gerald Batten, ফ্রান্সে National Front, অস্ট্রেলিয়াতে Pauline Hanson আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদের অন্যতম।
এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা, প্রতিবাদে ঝড় উঠে , সাথে সাথে শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক ভণ্ডামি শুরু হয়। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিনডা আর্ডেন ঘোষণা করেন " নিউজিল্যান্ডে ঘৃণার কোন জায়গা নেই"। অথচ জেসিনডা আর্ডেন এর নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড লেবার পার্টি নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টির সাথে সরকার গঠন করে ২০১৭ সালে। নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টি প্রকাশ্যেই ফ্যাসিবাদী দল। জেসিনডা আর্ডেন মন্ত্রী সভায় নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টির সদস্য রয়েছে। প্রসঙ্গত ২০১৭ সনের দেশটির জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টি প্রাপ্ত ভোটের মাত্র ৭.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। ইতিমধ্যে জেসিনডা আর্ডেন সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে অনেক কোথায় বলেছেন, মুসলিম অভিবাসিতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের আগ্নেয় অস্রের লাইসেন্সে আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। জেসিনডা আর্ডেন এর এসব কর্মকান্ড প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু ঘরের মধ্যে - সরকারে অভিবাসন বিরোধী নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টিকে সাথে নিয়ে সমাজের মধ্যে যে বর্ণবাদী চিন্তা চেতনা রয়েছে তাকে কি ভাবে মোকাবেলা করবে তা স্পষ্ট নয়।
মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট,২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক, বর্ণবাদী ও শেতাঙ্গদের প্রাধান্য ও শ্রেষ্টত্ব -এ বিশ্বাসী । অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অভিভাসন সম্পর্কিত চুক্তি থাকার কারণে উভয় দেশের নাগরিকেরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের সমান নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে বসবাস করতে পারে। ব্রেন্টন টারান্ট অভিভাসন আইনের শিথিলতাকে কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ডে আস্তানা পেতে বসে। হামলাকারী ব্রেন্টন হামলার সময় হেলমেট ক্যামেরা থেকে আক্রমনের সরাসরি সম্প্রচার করে। এই ভিডিও ক্লিপগুলি ফেইসবুক , টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধমের প্রচার বর্ণবাদী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ব্রেন্টন টারান্ট গণহত্যা উদ্দীপনা ও বর্ণবাদ প্রচারের জন্য জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে।
এই হামলার দুই দিন আগে, হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট নরওয়ের নব্য-নাৎসি, গণ হত্যাকারী, Anders Breivik এর অনুসরণ করে ৭৪ পাতার ঘোষণা পত্র "The Great Replacement" প্রকাশ করে। এই ঘোষণাপত্রে মুসলিম অভিবাসন ও সন্ত্রাসবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে "নতুন সাদা" যুগ স্থাপনকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ব্রেন্টন টারান্ট নরওয়ের নব্য-নাৎসি, গণ হত্যাকারী, Anders Breiviকে আদর্শ ও অনুপ্রেনা হিসেবে বর্ণনা করেছে। ২০১১ সনে Anders Breivi গুলি করে ৭৭ জন ছাত্র যুবককে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ব্রেভিক নারীবাদী ও কালো ও এশিয়ান, মুসলিম, ইহুদি, সমকামী বিরোধী। নিউজিল্যান্ডে হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট সহ এই ঘরনার অনেকের কাছে Anders Breivi ঘৃণা সৃষ্টির ‘আদর্শ ' মানুষ হিসেবে পরিচিত।
Anders Breivi কোন উপাসনালয়ে হামলা চালায়নি। তার হামলার লক্ষ্য Workers' Youth League (AUF), সম- সমাজ পন্থী রাজনৈতিক সংগঠন। Anders Breivi লক্ষ্য বস্তু Workers' Youth League (AUF) কারণ এই সংগঠনটি শরণার্থীদের সমর্থন ও সাহায্য করে আসছিলো । Anders Breivi হত্যার শিকারদেরকে “race traitors" হিসেবে বর্ণনা করেছে। Anders Breivi হত্যাকাণ্ডের উদাহরণটি পরবর্তী বছরগুলিতে বর্ণবাদী কর্মকান্ডকে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে। Breivik এর জঘন্যতম গণহত্যা একাকীই সংগঠিত করে ছিল , তার কোন সহযোগী ছিল না বলেই নরওয়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মনে করে।
Breivik মত লোকেরা কল্প কাহিনী ( মিথ) , মিথ্যা - ষড়যন্ত্রকে রঙ লাগিয়ে প্রচার করতে সিদ্ধহস্ত। এরা নিজেদের মত - পথ প্রচারের জন্য বন্দুক ও সামাজিক গণ মাধ্যমকে ব্যবহার করে সচরাচর গোপন নেটওয়ার্ক , সম্প্রদায় গড়ে তোলে। টারান্ট এর ম্যানিফেস্টো ব্রিভিকের ম্যানিফেস্টো এর অনুরূপ, দুটোতেই নতুন কিছু নেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার কৃত পুরানো , প্রচলিত বর্ণবাদী ধারণা গুলোকে একসাথে গ্রন্থিত করা।
অনেকদিন ধরেই উপাসনালয় আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু। তবে শুধু মাত্র মুসলমানদের উপাসনালয় আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, কালো মানুষদের গীর্জা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৭ জুন আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনা শহরের চার্লসটন শহরের আফ্রিকান মেথডিস্ট গীর্জায় বর্ণবাদী হামলায় ৯ জন কালো মানুষকে হত্যা করা হয়। ২০১৭সালের ১১-১২ অগাস্ট , নব্য নাৎসিরা আমেরিকার ভার্জিনিয়া " ইহুদিরা আমাদের প্রতিস্থাপন করবে না" এবং " আমাদের রক্ত আমাদের মাটি " স্লোগান দিয়ে খুনাখুনি চালায়। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর, আমেরিকার পেনসিলভানিয়াতে ইহুদী উপাসনালয়ের উপর হামলা ১১ জনকে হত্যা ও সাত জনকে মারাত্মক ভাবে আহত করে নব্য নাৎসিরা। ২০১০ সালের ২৮ মে পাকিস্তানের দুইটি পৃথক হামলায় শিকার হন আহমেদিয়া মুসলিমদের মসজিদ। ৯৪জন নিহত ও ১২০ জনের মত আহত হয় এই হামলা দুইটিতে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে শিয়া মুসলিমরা তাদের মসজিদে বহুবার সহিংস হামলার শিকার হয়ে আসছেন। পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই আহমাদিয়া মুসলিমরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চাকুরী ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের পাশাপাশি সহিংসতার শিকার।
বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে নিউজিল্যান্ডের এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করেছে। অধিকাংশ মুসলিম প্রধান দেশে গণতান্ত্রিক বাবস্থা , আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, যা আছে তা হল নামকায়াস্তে নির্বাচন ।এই সমস্ত দেশের শাসকদের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিনিতিতে জনসংখার বড় অংশ বেকার, লাখ লাখ লোককে কাজের সন্ধানে দেশান্তরী হতে হয়েছে। মুসলিম দেশ গুলোতে জাতীয় ও ধমীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা শোচনীয়। বিগত ৫০ বছরে সমস্ত মুসলিম প্রধান দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের সংখ্যা কমেছে। এই সংখ্যা কমে যাবার পিছনে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও নিরাপত্তা হীনতা কাজ করেছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০% এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০% । পাকিস্তানে হিন্দু ও খৃস্টান দের সংখ্যা কমার হার বাংলাদেশের অনুরূপ। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আহমেদি মুসলিমদের উপর নির্যাতন প্রকাশ্যেই হয়ে থাকে। আহমেদি মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার মানুষের সংখ্যা কম , আর যারাই কথা বলেন তাদের উপর ধমীয় উগ্রপন্থীদের খড়গ নেমে আসে। ক্ষমতাসীনরা ধর্মীয় উগ্র পন্থাকে কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে সমর্থন করে। তুরস্ক , পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান এর মতো দেশে দেশে জাতি সুমুহের আত্ম নিয়ন্ত্রণের সংগ্রামকে চরম নিপীড়ন করে দমিয়ে রাখা হচ্ছে।
তুর্কি রাষ্ট্রপতিএরদোগান ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ গণহত্যার অস্ট্রেলিয়ান বন্দুকধারীর সাথে এক শতাব্দীরও বেশি আগে অস্ট্রেলিয়ায় এবং নিউজিল্যান্ডের সেনাদের জড়িত যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান বন্দুকধারীকে সংযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। তুর্কি রাষ্ট্রপতিএরদোগান অন্তত পক্ষে আটটি নিবার্চনী জনসভায় মসজিদের শুটিংয়ের ফুটেজ প্রচার করে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে ভোটারদের আকৃষ্ট কোনো উদ্যোগী হয়েছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিউজিলান্ডের সন্ত্রাসী হামলাকে অমুসলিমদেরকে কোনঠাসা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই সকল হত্যা, অত্যাচার - সেটা মুসলিম ,ইহুদী, অভিবাসী শ্রমিক, কালো কিংবা এশিয়ান, আহমাদিয়া - শিয়া মুসলিম দের বিরুদ্ধে হোক না কেন এই গুলোর মধ্যে একটা যোগ সূত্র রয়েছে। সাধারণ যোগসূত্র হচ্ছে বর্ণবাদ - পরমত অসহিষ্ণুতা। অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা - পুঁজিবাদের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে , এই সংকট কাল পুঁজিবাদ উত্তরণের জন্য নানা ধরণের পশ্চাদপদ ধারণাকে লালন ও উৎসাহিত করে। সমাজ শ্রেণী বিভক্ত।যখন শ্রেণী বিভিক্ত সমাজের কোন অংশ তীব্র সামাজিক সংকটের মুখোমুখি হয় , কিন্তু এই সামাজিক সংকটের উৎস দেখতে পারে না তারা সহজেই সামাজিক সংকটের জন্য অন্য কোন অংশকে দায়ী ভাবে। সামাজিক সংকটের মুখোমুখি অংশ তাদের বঞ্চনা - বিরক্তির জন্য সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশকে দায়ী করে থাকে। এই হচ্ছে বর্ণবাদের দার্শনিক ভিত্তি। বর্ণবাদ - পরমত অসহিষ্ণুতা পুঁজিবাদের অভ্যান্তরীন সংকটের ফল।
বর্ণবাদী চিন্তা, জাতি - সম্প্রদায় গত বিদ্বেষ, ছড়ানোর মূল হোতা হচ্ছে ডানপন্থী পুঁজিবাদী দল, কোটিপতি মিডিয়া, এবং বিদ্যমান ব্যাবস্থায় আস্থাশীল নানান কিসিমের রাজনৈতিক শক্তি। এদের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা নব্য নাৎসিদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠী গড়ে উঠে । সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা নেটওয়ার্ক , নব্য নাৎসিদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, বিভিন্ন প্রান্তিক উগ্রপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী পুঁজিবাদী বাবস্থার সংকটকালীন সময়ে পুঁজিবাদের বজ্রমুষ্টি হিসেবে কাজ করে। পুঁজিবাদের ব্যার্থতার জন্য অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জাতিগত ঘৃণা ছড়ায় , সন্ত্রাসী হামলা চালায়। যখন দেশে দেশে গণ আন্দোলন দুর্বল হয়ে পরে সেই সময় এই প্রান্তিক শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকারীরা নিউজিল্যান্ডের ঘটনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে জনসাধারণকে বিভক্ত ও শাসন ব্যাবস্থার সংকট প্রধানতঃ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি , বেকারত্ব থেকে মানুষের দৃষ্টিকে দূরে সরিয়ে রাখার কাজে নিয়োজিত । উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে অভ্যান্তরীন সংকটে থেকে মানুষের দৃষ্টিকে মানুষের দৃষ্টিকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নিউজিল্যান্ডের মত ঘটনা কে ব্যবহার করছে ফ্যাসিবাদি শক্তি। ফ্যাসিবাদ এবং ধর্মীয় মৌলবাদ উভয় সমান প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ।
আজকে ইউরোপ - আমেরিকা জুড়ে যে ধরণের Islamophobic প্রচারণা চলছে ১৯০০ -১৯৫০ পর্যন্ত ইউরোপ - আমেরিকাতে একই ধরণের প্রচারণা চলে ছিল ইহুদিদের বিরুদ্ধে। উভয় প্রচারণার ভিত্তিগত বিষয় গুলো একই শুধু পার্থক্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের। বর্ণবাদের এই সংস্কৃতির থেকে এসেছে অভিবাসী ব্যক্তিদের নাজেহাল ও আক্রমণ করার প্রবণতা - চেষ্টা।
অভিবাসী, সংখ্যালঘু জাতিগত বা ধর্মীয় সম্প্রদায় এর নিরাপত্তার জন্য সমাজের বিভিন্ন ধারার অসাম্প্রদিক, অসংকীর্ণতাবাদী [ non sectarian, non communal ] সাথে নিয়ে এক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্যদিয়েই বর্ণবাদী ও ফ্যাসিবাদী প্রচেষ্টা বন্ধ করা সম্ভব।